২০০৪-এর আগে গ্রামে হত না দুর্গাপুজা, স্থানীয় ঢাকিরা ঢাকে বোল তুলে পুজোর জানান দিত

তমন্না দাস
তারকেশ্বর থেকে বেশ কিছুটা দূরে গ্রাম শিবপুর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন হয়েছে গ্রামের। কাঁচা মাটির রাস্তা পাকা হয়েছে। বাড়ির দরজা পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা। গ্রামের বুক চিরে ছুটে চলেছে ট্রেন (তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর লাইন)। সমস্ত মাটির বাড়ি পাকা হয়েছে। জীবিকার পরিবর্তন হয়েছে গ্রামের মানুষের। অনেকেই এখন বহির্মুখী বিভিন্ন জীবিকা বেছে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পুজোর মুখে কেমন আছেন শান্তিপুর, কৃষ্ণনগরের শোলাশিল্পীরা?

গ্রামীণ দুর্গাপুজো নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলি ২০০৪ সালের আগে এই গ্রামে দুর্গাপুজা হত না। গরিব গ্রামের মানুষের সামর্থ্য ছিল না পুজো করার। আমাদের কাছে দুর্গাপুজো আসত প্রকৃতির পরিবর্তনকে সঙ্গে নিয়ে। বদলে যাওয়া প্রকৃতি জানান দিত মা আসছে। হঠাৎ সবকিছু যেন খুব ভালো লাগত। পুজোর একমাস আগে থেকেই বাড়ির পিছনের একটা মাঠে ঢাকিরা সন্ধ্যায় তাদের ঢাকে বোল তুলত। সন্ধ্যার অন্ধকারে ঢাকের মিষ্টি আওয়াজ মনে খুশির সঞ্চার করত। খালের দু’পাশে কাশফুল জানান দিত পুজো আসছে। সবুজ কার্পেটের মাঝে কাশ অপরূপ শোভার সৃষ্টি করত। বাগানের শিউলিতলা ফুল বিছিয়ে মাকে অভ্যর্থনা জানাত।
আরও পড়ুন: ছাতাটাঁড়ের দুর্গাপুজোর পৌরোহিত্য করতে বাঁকুড়া থেকে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ড, বাকিটা ইতিহাস

বাড়িতে পুজোর আগেই গাছ থেকে নারকেল পাড়া হত। মা, ঠাকুমা মহা উৎসাহে নাড়ু বানাত। দশমীর দিনে এই নাড়ুর কদর ছিল খুব। আমাদের পাশের গ্রামে দুর্গাপুজো হত। আমরা একদিন সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে যেতাম। ব্যস একদিন মায়ের দর্শনেই পুজো শেষ। নতুন জামা-কাপড় সব বাড়িতে পরেই আমাদের পুজোর সাজ সম্পূর্ণ হয়ে যেত।
আরও পড়ুন: চালচিত্র এঁকে নিজেই যেন গ্রামের দুর্গা কৃষ্ণনগরের চিত্রকর রেবা পাল

এখন মহাসমারোহে গ্রামে দুর্গাপুজো হয়। পুজোর দিনগুলোতে মায়ের মণ্ডপ গোটা গ্রামের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এখানে এখনও আমার আপশোস হয় যে, আমার বিয়ের পরের বছর থেকে গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ায়। যাইহোক শহরের দুর্গাপুজোর আলোর রোশনাইয়ের মাঝেও আমার মন এখনও ছুটে যায় সবুজের সমারোহে ঘেরা আমার গ্রাম ও অন্ধকার রাতে ঢাকিদের ঢাকের মিষ্টি বোলের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য।

ছবি: লেখক