২৭৫ বছরের পুরনো রানাঘাটের দে চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো

মিলন চট্টোপাধ্যায়
ড্যাং ড্যাডাং ড্যাং ড্যাডাং— ঢাকে পড়ল কাঠি। সেজে উঠেছে প্রকৃতি তাঁর অবিশ্বাস্য রূপের ডালি নিয়ে। নদী হয়ে উঠেছে একটু শীর্ণকায়া, সাদা বালির চরে ফুটে উঠেছে কাশ। মেঘের দলে অলস মন্থরতা। শরতের আকাশে কোনও করোনার থাবা নেই। আনাগোনা বেড়েছে কাঠবেড়লির।

রানাঘাট নামক এই প্রাচীন জনপদে এবার পুজোর তোড়জোড় কম। বাড়ির পাশের কুমোরবাড়িতে কমে গেছে মৃৎশিল্পীর সংখ্যা। যে ক’জন আছেন মুখোশ পরে তাঁদের রোবটের মতো মনে হচ্ছে। তবু বাড়ির পুজোগুলি হবে নমঃ-নমঃ করে। বেশকিছু বাড়ির দুর্গাপুজো অত্যন্ত প্রাচীন। পালচৌধুরী বাড়ির কথা সকলেই জানেন। আজ বলব দে চৌধুরী বাড়ির কথা।

দে চৌধুরী পরিবার রানাঘাটের অন্যতম প্রাচীন পরিবার। পালচৌধুরী বংশের কৃষ্ণ পান্তির সমসাময়িক সময়ে রামসুখ দে চৌধুরী ব্যবসায় বিরাট উন্নতি করেন। তিনি মালদা, হাটখোলা এসব অঞ্চলে গদি নির্মাণ করে এত লাভবান হন যে, জমিদারি কিনে ফেলেন। রানাঘাটের চূর্ণি নদীর ধারে তিনি প্রাসাদ নির্মাণ করান পরবর্তীকালে নদীর ভাঙনে সেই বাড়ি ধংস হলে ১১৯৮ বঙ্গাব্দে বর্তমান বাড়িটি তৈরি হয়।

১১৫৩ সনে এই বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। রামসুখ দে চৌধুরী এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। সারাবছর বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজন এই সময়ে ঘরে ফেরেন। গমগম করে ওঠে বিরাট নির্জন এই বাড়ি। রানাঘাটে যত বনেদি বাড়ি আছে তার মধ্যে সবথেকে সুন্দর দেখভাল করে বাড়িটি এখনও ভালো রেখেছেন এই পরিবারের সদস্যরা। এই পুজোর বয়স ২৭৫ বছর। সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে এই পুজো হয়। নবমীতে বলি দেওয়া হয় মাষকলাই। রাধা- অষ্টমীর দিন ১১ ফুট লম্বা প্রতিমা গড়ার সূচনা হয়। কবি নিজন দে চৌধুরী এই বাড়ির সন্তান, কুমুদরঞ্জন মল্লিকের শ্বশুরঘরও এই বাড়ি। করোনা কমলে যদি পুজোয় কখনও রানাঘাট আসেন, তাহলে এই পুজোয় একবার আসবেন। মন ভরে উঠবে এক অনাস্বাদিত ভালোলাগায়।
উপরের দু’টি ছবি ২০১৯-এ লেখকের তোলা
খুব ভালো লাগলো।
রামসুখ দে চৌধুরীর আদি বাড়ীটা ছিল চূর্ণী নদীর পশ্চিমপাড়ে আঁইশতলা অঞ্চলে কোথাও।