সামনেই হোলি এবং ভোট! ভেষজ আবির তৈরিতে ব্যস্ত শান্তিপুরের কৃষাণ স্বরাজ সমিতির মহিলা গোষ্ঠী

Mysepik Webdesk: পাহাড়ি গাছ মঞ্জিষ্ঠার শিকড় থেকে লাল রং, তুঁতে গাছ থেকে নীল রং, সিম, শসা সহ নানান পাতা থেকে সবুজ রং, কমলালেবুর খোসা থেকে গেরুয়া, গাঁদা ফুল থেকে হলুদ রং, পুঁই মেটুলি থেকে রানী, এভাবেই মূল দশটি রং ভুট্টার এরারুটের মিশ্রণে তারতম্য ঘটিয়ে হালকা গাঢ় আরও দশটি রং উপস্থাপিত করে ভেষজ আবির উৎপাদন করে চলেছেন, মঞ্জুরি এস এইচ জি মহিলা গোষ্ঠী। বাঙালির দোল পর্ব চলে প্রায় একদেড় মাস যাবৎ! তারপর রয়েছে আবার বিধানসভা ভোটের ফলাফল। তাই মঞ্জুরি মহিলা গোষ্ঠীর নজন সদস্য, বাড়ির সাংসারিক কাজকর্ম সেরে, দুপুর দুটোর মধ্যে চলে আসেন শান্তিপুর দত্তপাড়ার কৃষাণ স্বরাজ সমিতির অফিসে।
আরও পড়ুন: ‘নির্বাচন আসলেই ওরা ক্যাশ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে’, গড়বেতায় বিজেপিকে কটাক্ষ মমতার

সংগঠনের শান্তিপুরের দায়িত্বে থাকা শৈলেন চন্ডী জানান, শিশু থেকে বৃদ্ধ এ আবিরে ক্ষতি হয়না কারো। চোখে গেলে বা খেয়ে ফেললেও শিশুদের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। ২০০ টাকা কেজি দরে এই আবির পাওয়া যায়। দাম একটু বেশি হলেও, বাজারচলতি চকের গুঁড়োর সঙ্গে কেমিক্যাল মেশানো আবিরের থেকে অনেকটাই ভালো।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার মঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুললেন নরেন্দ্র মোদি
লকডাউনে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে, সংসার চালাতে অসুবিধেই পরে অনেকেই। এমন সময় পরিচিত শৈলেন বাবুর দ্বারস্থ হন কয়েকজন গৃহবধূ, শৈলেন বাবু তাদের সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন সাবান, শ্যাম্পু ও শীতকালীন বডি লোশন তৈরির অবৈতনিক প্রশিক্ষণ শিবির। তাদের দেখা দেখি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দেবারতী চন্ডী, শ্রেয়া প্রামানিক এম এ দ্বিতীয় বর্ষ মতো বেশকিছু ছাত্রীও স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদে কাজে হাত লাগান পড়শী দিদি কাকিমাদের সঙ্গে। তারা নিজেরাই এইগুলো আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবীদের কাছে খুচরো দামে বিক্রি করেন। তা থেকে যা বাড়তি লাভ মিলতো তা তাদের উপার্জন হত। উৎপাদন বেশি হলে শৈলেন বাবু সরকারি বিভিন্ন মেলায়, জেলার বিভিন্ন হস্তশিল্প এবং ক্ষুদ্র কুটির শিল্প বিভাগের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন।
সংগঠনের মহিলা সভানেত্রী সোমা মুখার্জি জানান, পেশার শিক্ষকতা, এবং সংসারের দায়িত্বের চাপে সৃজনশীলতা ভুলে গিয়েছিলাম। ছেলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর এদের নিয়ে ফের একবার নতুন করে বাঁচতে শিখেছি, নিজেকে খুব গর্বিত মনে করি এতগুলো মেয়ের পরিবারের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাতে পারছে দেখে। আগামীতে অনেক স্বপ্ন আছে, বাঁচতে হবে অনেক বছর। ওরাও প্রত্যেকের এ ধরনের ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলবে, তখনই পূরণ হবে স্বপ্ন। কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অনেক মানুষ ভেষজ সাবান শ্যাম্পু কিনতে যোগাযোগ করেছেন, শৈলেন বাবু সেগুলো অর্ডার অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসে পৌঁছান। এখন থেকেই আবীরের যে অর্ডার পড়ছে, তাতে সঞ্চয় বোধহয় আর হবে না।