সাইদুর রহমান
বণিকের মানদণ্ড
একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে মুর্শিদাবাদ মানচিত্রে স্থান পেয়েছিল ১৭৮৬ সালের ২৫ এপ্রিল। আর তার আগে ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে সিরাজের পতনের ফলে এই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনা হয়েছিল। ‘বণিকের মানদণ্ড’ ‘রাজদণ্ড’ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল এই জেলা থেকেই। সূচনা হয়েছিল সমগ্র ভারতের পরাধীনতার।
প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা
আবার এই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকেই ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে যে সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ছিল সেই মহাবিদ্রোহের সূতিকাগার। ১৮৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারি, বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার থেকে বিদ্রোহের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ প্রথমে ব্যারাকপুর, তারপর ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যারাক স্কোয়ারের বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যারাকপুরে সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। লড়াইয়ের মাঠে কয়েকজন ইংরেজ সৈন্যকে হত্যা করে শেষে নিজেই নিজের রিভলভার থেকে নিজের বুকে গুলি করেন তিনি। প্যারেড গ্রাউন্ডে লুটিয়ে পড়েছিল তাঁর দেহ। ইংরেজরা আহত শরীরকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিবাদী মঙ্গল পান্ডেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন ১৮৫৭ সালের ৮ এপ্রিল।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ জেলার সংবাদ-সাময়িক পত্রের দু’শো বছর

গোটা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন সবচেয়ে বেশি গতি পেয়েছিল বিংশ শতাব্দীর পর থেকে। সমগ্র ভারতবর্ষের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলাও ইংরেজ বিরোধী ও ভারতের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই জেলায় ইংরেজ-বিরোধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনটি সুস্পষ্ট ধারা লক্ষ্য করা গিয়েছিল― ১। মুসলিম লিগের নেতৃত্বের ধারা, ২। জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের ধারা, ৩। সংগ্রামশীল জাতীয়াতাবাদী নেতৃত্বের একটি ধারা। এই তিনটি ধারায় এই জেলায় প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় ছিল।
মুসলিম লিগের ধারা
১৯০৬-এর ৩০ ডিসেম্বর, ঢাকায় ‘মুসলিম লিগ’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, লিয়াকত আলি খান, এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মতো প্রথম সারির মুসলিম নেতৃবৃন্দ। মুর্শিদাবাদ ছিল প্রথম থেকেই মুসলিম অধ্যুষিত জেলা। ফলে এই জেলায় খুব সহজেই মুসলিম লিগের প্রভাব পড়ে। এই জেলার বেশকিছু সম্ভ্রান্ত মুসলিম ক্রমেই মুসলিম লিগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে আবদুল বারি, জনাব মুহাম্মদ আফাজউদ্দিন, মৌলবি আবদুল গণি, মাওলানা আবদুল মোমিন, সাখাওয়াত হোসেন আল-কাদরি প্রমুখ ছিলেন অন্যতম। এঁরা বিশেষ করে গোটা পূর্ববঙ্গে মুসলমানদের ‘বিশেষ স্বার্থরক্ষা’র জন্য প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিলেন। জেলাজুড়ে এই নেতৃবৃন্দ মুসলিম লিগের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে প্রথম থেকেই ছিলেন তৎপর। পরবর্তীতে এঁদের সঙ্গে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ’র পরিচয় হয় ও আলি জিন্নাহ’র উগ্র সমর্থক হয়ে ওঠেন এঁরা। এঁদের নেতৃত্বে ১৯৩৭-এর অক্টোবর মাসে ‘বহরমপুর কুমার হোস্টেল’ প্রাঙ্গণে মুসলিম লিগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং আলি জিন্নাহ। মুসলিমদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করা এসব বিষয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত, দেশ স্বধীন হওয়ার পর এই জেলার মুসলিম লিগ নেতৃত্বের অধিকাংশই জাতীয় কংগ্রেসের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। আর বৃহত্তর অংশ পাকিস্তানে চলে যান।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ এবং চার বাঙালি যুগপুরুষ

জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের ধারা
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ জেলাতেও জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের প্রভাব ছিল অপরিসীম। এই জেলায় ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা রেজাউল করীম, মাওলানা আব্দুস সামাদ, এ ইউসুফ জিলানী, মাকসুদাল হোসেন, শ্যমাপদ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর সান্যাল, দুর্গাপদ সিংহ, মঙ্গলময় মৈত্র, দেবেন্দ্রনাথ দত্ত, রাহিলা খাতুন, বিজয় ঘোষাল, সৈয়দ আব্দুর রহমান ফেরদৌসী, সুকুমার অধিকারী, ব্রজভূষণ গুপ্ত, ছত্রপতি রায় প্রমুখ নেতা। তবে সেই সময় জেলার মুসলিম লিগের মুখপত্র ‘ইসলাম জ্যোতি’ যেভাবে ‘মুসলিম মানস’কে লিগমুখী করে তুলতে সমর্থ হয়েছিল, জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব সেভাবে পারেনি। তবু, রেজাউল করীম ও আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে এই জেলায় জাতীয় কংগ্রেস জেলার মানুষকে ইংরেজ-বিরোধী ও কংগ্রেসমুখী করে তুলতে বেশ সমর্থ হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ ও ভারতছাড়ো আন্দোলনে এই জেলার অগণিত মানুষ জাতীয় কংগ্রেসের ছায়াতলে যোগ দিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী নিজে রাস্তায় নেমে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করেছিলেন।
সংগ্রামশীল ও আপসহীন নেতৃত্বের ধারা
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন আপসহীন ও আপসমুখী— এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের তীব্রতা ঝড়ের মতো আছড়ে পড়েছিল বাংলার ঘরে ঘরে। এই বঙ্গভঙ্গের সময়কালেই মুর্শিদাবাদ জেলার বিশেষ করে কৃষ্ণনাথ কলেজকে কেন্দ্র করে বহরমপুর শহর আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময় কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন এডোয়ার্ড মনোমোহিনী হুইলার। মূলত তাঁর নির্ভয় আশ্রয়ছায়াতলে সেদিন কৃষ্ণনাথ কলেজের একদল ছাত্র দেশকে ভালোবাসতে শিখেছিলেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকার সম্পাদক কৃষ্ণকুমার মিত্র, অনুশীলন সমিতির পুলিন দাস ও বহরমপুরের ভূপেশচন্দ্র নাগ। ১৯১০ সালে দীপান্তর থেকে ফিরে এসে ভুপেশ পুনরায় গুপ্ত সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। অতুল কৃষ্ণ ঘোষ, সতীশ চক্রবর্তী, শিশির ঘোষ ছিলেন কৃষনাথ কলেজের ছাত্র, অধ্যাপক এবং বিপ্লবী বাঘা যতীনের প্রিয় শিষ্য। ইতিহাসের বিখ্যাত মুরারিপুর বোমার ষড়যন্ত্র মামলায় শিশির ঘোষ দণ্ডিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুর্শিদাবাদ

বাঘা যতীন সশস্ত্র বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীনতা লাভের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি জার্মানির সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখান থেকে প্রচুর অস্ত্র আনতে চেয়েছিলেন। জাহাজ ভর্তি অস্ত্র নামানোর ভার পড়েছিল কৃষ্ণনাথ কলেজের তরুণ ছাত্র অতুল ঘোষ, সতীশ চক্রবর্তী ও যোগেন্দ্রনাথ সরকারের উপর। বহরমপুর থেকে অস্ত্র যাওয়ার কথা ছিল রাজশাহীতে। অজয় নদের পুল ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্বও ছিল সতীশ চক্রবর্তীর উপর। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের কাছে গোপন সংবাদ পৌঁছে গেলে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। কৃষ্ণনাথ কলেজের কয়েক শত ছাত্র সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের হাতে প্রেপ্তার হন। ১৯১৫ সালে বালেশ্বরে এক অসম যুদ্ধে বিপ্লবী বাঘা যতীনের মৃত্যু হলে মুর্শিদাবাদে আরও কিছুদিন বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চলেছিল। বিপ্লবী ধারার এই কাজটি সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বিপ্লবী নলিনী বাগচী, সূর্যসেন প্রমুখ। ১৯১৬ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় সূর্য সেন অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তিনি যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৮ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে সূর্য সেন চট্টগ্রামে ফিরে যান ও সেখানে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯২৩-এ ৩নং রেগুলেশন আইনে বন্দি সুভাষচন্দ্র প্রেসিডেন্সি জেল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলের ৭নং ঘরে এসেছিলেন। বর্তমানে এটি এখন মানসিক হাসপাতাল। এই বছরেই সুভাষচন্দ্র জেল থেকে ছাড়া পান। কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্র, বহরমপুরের তরুণ যুবকরা সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে শহর পরিক্রমা করেছিলেন। এই সময় সুভাষচন্দ্র তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে জেলার তরুণ যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে বিপ্লবী চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: রাজ্যের প্রথম গ্রন্থমেলাও হয় এই মুর্শিদাবাদ জেলায়

মহিলাদের অবদান
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে বেশকিছু মহিলা সমিতিও গড়ে উঠেছিল। তবে এই সময় মেয়েরা বাড়ির বাইরে এসে সভা সমিতিতে যোগ দিতেন খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা পাড়ায় কারও বাড়িতে জড়ো হতেন। যেমন, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বহরমপুর ও কান্দির মেয়েরা স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদের কান্দিতে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বাড়িতে প্রায় ৫০০ মহিলা ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ শুনিয়ে অরন্ধন করে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করেছিলেন। মুর্শিদাবাদ মহিলা সমিতির মধ্যে ‘মুর্শিদাবাদ মহিলা রাষ্ট্রীয় সমিতি’ ছিল উল্লেখযোগ্য মহিলা সমিতি। মণিমালা দেবী ও মৃণাল দেবী সমিতির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। নেতাজি সুভাচন্দ্রের সঙ্গে মণিমালা দেবী ও মৃণাল দেবীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ১৯৩৯-এর ৩১ জুলাই, সুভাষচন্দ্র মৃণাল দেবীকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলায় মহিলা সমিতির কাজ প্রসারলাভ করিতেছে জানিয়া আমি সুখী হইয়াছি। নারীসমাজে জাতীয়তার বাণী প্রচার করা বিশেষ প্রয়োজন এবং সেই কাজের জন্য মহিলা সমিতির ও মহিলা কর্মীর বিশেষ আবশ্যকতা আছে…”।
আরও পড়ুন: জনঅরণ্যে সম্প্রীতির বার্তা

মুর্শিদাবাদের মহিলাদের মধ্যে অন্যতম এক মহিলা ছিলেন রাহিলা খাতুন। বেলডাঙার ঝুনকা গ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশবে তিনি নিরক্ষর ছিলেন। দেখতে সুন্দরী রাহিলা বিয়ে হয়েছিল সালারের সরমস্তপুর গ্রামে আবদুল খলিল খানের সঙ্গে। বিয়ের পর স্বামী খলিলের আশ্রয়ে লেখাপড়া শেখেন লাইলা। স্বামী খলিল খান ছিলেন অনুশীলন সমিতির সালারের আঞ্চলিক শাখার প্রধান। ১৯৩৭ সালে রাহিলা অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাবন্দি হন।
মুর্শিদাবাদে স্বাধীনতা দিবস পালন
ভারতের স্বাধীনতা লাভ হয় ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট। কিন্তু মুর্শিদাবাদের মাটিতে স্বাধীন ভারতের প্রথম তিরঙ্গা পতাকা ওঠে ১৮ অগস্ট। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৩ দিন ধরে তৎকালীন স্যার সিরিল রাডক্লিফের বাউন্ডারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মুর্শিদাবাদ জেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল পাকিস্তানে৷ আর খুলনা জেলা হয়েছিল ভারতের অংশে। ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট জেলার সদর শহর বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে পাকিস্তানের নামে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয়েছিল। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা সরকারিভাবে তুলেছিলেন সেই সময়ের মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক আইসিএস অফিসার আই. আর. খান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কাজেম আলি মির্জা, সনৎ রাহা, নিতাই গুপ্ত, শ্যামাপদ ভট্টাচার্য প্রমুখ। শহরের প্রধান সরকারি দফতর ছাড়াও অনেকের বাড়ির ছাদে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লন্ডন মিশনারি স্কুল সর্বত্রই উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা।
আরও পড়ুন: শ্রমিকের সামান্য ‘পান্তা ভাতে’ একটু লবণের ব্যবস্থার হোক

মুর্শিদাবাদে তখন এক ভয়ংকর আতঙ্ক আর সংশয়ের পরিবেশ। মুসলিম লিগ ও পাকিস্তান-পন্থী অনেকের মুখে তখন স্লোগান শোনা যেত “হাতে বিড়ি, মুখে পান, লাঠির আগায় পাকিস্তান”। অন্যদিকে, কংগ্রেস সমর্থিত ও পাকিস্তান-বিরোধীদের মুখে মুখে ধ্বনিত হত, “লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্থান, যাব না তো পাকিস্তান”। এই চরম সংকটকালে মুর্শিদাবাদের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ সহ অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা আলোচনা করতে লাগলেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জার সহযোগিতায় ‘হিন্দু মুসলিম কনফারেন্স’-এর আয়োজন করা হয়েছিল লালবাগে। এখানে সব ধর্মের মানুষকে ডেকে আমন্ত্রিত করে জেলাজুড়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়। এদিকে দিল্লিতে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ মুর্শিদাবাদকে ভারতের মধ্যে ঢোকাতে তৎপর হন। চলে মরণপণ চেষ্টা। তিন দিনের টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ১৯৪৭-এর ১৭ আগস্ট ভারত ইউনিয়নে যুক্ত হয় মুর্শিদাবাদ জেলা। গোটা জেলায় শুনশান আর আতঙ্কের পরিবেশ ভেঙে মুর্শিদাবাদের মানুষ প্রথম স্বাধীনতা দিবসের স্বাদ পান ১৮ আগস্ট, ১৯৪৭। সেদিন বহরমপুর শহরের বুকে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে জেলাশাসক আই. আর. খান নিজের হাতে দ্বিতীয়বার ভারতের জাতীয় পতাকা তোলেন।