Mysepik Webdesk: গত কয়েকদিন ধরে গোটা বিশ্বের চোখ ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের দিকে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে বিশ্ব। এখন এই যুদ্ধের সম্ভাবনা শুধু পূর্ব ইউরোপেই নয়, এর উত্তাপে আমেরিকা ও ভারতেও পড়েছে। সারাবিশ্বের শেয়ার বাজারে অলরাউন্ড বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এই উত্তেজনার কারণে ভারতের অর্থনীতি ও বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: বুধবারই ইউক্রেইনকে অ্যাটাক করতে পারে রাশিয়া!
ভারতে ইউক্রেনের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে ২.৬৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। যা ছিল ভারত-ইউক্রেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। এর মধ্যে ইউক্রেন ভারতে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, ভারত ইউক্রেনে ৭২১.৫৪ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে। ইউক্রেন ভারতে ফ্যাট অ্যান্ড অয়েল অফ ভেজ অরিজিন, সার, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর এবং বয়লারের মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে। ইউক্রেন ভারত থেকে ওষুধ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কেনে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ান আগ্রাসনের প্রতিবাদে পথে নামলেন ইউক্রেনিয়রা
ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারত ইউক্রেন থেকে ১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের ভোজ্য তেল কিনেছে। একইভাবে, ভারত ইউক্রেন থেকে প্রায় ২১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সার এবং প্রায় ১০৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পারমাণবিক চুল্লি এবং বয়লার আমদানি করেছে। পারমাণবিক চুল্লি এবং বয়লারের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার পরে ভারতে অন্যতম বৃহত্তম সরবরাহকারী এই ইউক্রেন। সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ভারতের কাজ ধীর হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনকে তিনদিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে রুশ-সেনা, চাঞ্চল্যকর দৃশ্য উপগ্রহ চিত্রে
গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের বাণিজ্যের ধারার দিকে তাকালে দেখা যায়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অনুযায়ী তা ওঠানামা করছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া নিয়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির আগে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। ২০১৫ সালে উত্তেজনার পরে এটি মাত্র ১.৮ বিলিয়ন ডলার নেমে এসেছিল। পরবর্তীতে, ইউক্রেনের সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্যের কিছুটা উন্নতি হয়েছিল, তবে এখনও তা পুরানো স্তরে পৌঁছয়নি। বর্তমানে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এই ব্যবসা আবারও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে নতুন আতঙ্ক ‘লাসা জ্বর’, এখনও পর্যন্ত মৃত ১
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. সুধীর সিং বলছেন, এই বিরোধের কারণে ভারতের জন্য কূটনৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। উত্তেজনা বাড়লে এবং ব্যাপক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে ভারতকে তার অবস্থান নিতে হবে। এমতাবস্থায় আমেরিকা বা রাশিয়ার পক্ষ নেওয়া সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে ভারতের অবস্থান থেকে স্পষ্টভাবে বোঝাই যাচ্ছে যে, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনায় সংকটে পড়েছে ভারত। অর্থনৈতিকভাবেও ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। ভারত অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং রাশিয়া অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে আমদানি বিল বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ স্তরে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক ভারতীয় শিক্ষার্থী ইউক্রেনে চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ভারত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।