সুরঞ্জন প্রামাণিক
কবে থেকে যেন মাথার মধ্যে এক-একটা শব্দের ঢুকে পড়া শুরু হয়েছিল… সেটা টের পেতাম রাতে। বালিশে মাথা রাখার পর। শব্দ কথা হত। আধো-জাগনো অবস্থায়-কি ঘুমের মধ্যে কথাদের জন্ম হত বলে দিনের বেলা কোনও কথাই আর মনে থাকত না। কেবল শব্দরা থেকে যেত মনে। সেই সব শব্দ নিয়ে আমি অবশ্য বাক্য রচনা করেছি কিন্তু স্বপ্নের কথারা কখনও সেই বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে হয়নি। যাই হোক এখন আমার মাথাটা শব্দে ভর্তি হয়ে আছে। দারুণ শব্দছক করতে পারি। কিন্তু যাকে বলে কথার পিঠে কথা সাজানো— এটা আমি ঠিক-ঠাক চালাতে পারি না। আর-একটা ব্যাপার— কেউ বলে থাকবেন, ‘প্রত্যেক শব্দ চিন্তা বহন করে’— এই কথাটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমার মাথার মধ্যে এক চিন্তানীহারিকার জন্ম হবে। ব্যাপারটা বেশ ভারী। নীহারিকা শব্দটি আমি বই থেকে জেনেছি যা থেকে তারার জন্ম হয়। আমার এক স্কুল-ক্লাসমেটের নামও ছিল নীহারিকা। রাতের আকাশের দিকে তাকালে আমার আজও বিস্ময় জাগে— উ-ই যে দূ-উ-রে কোথাও নীহারিকা নক্ষত্র হবে বলে… কী যে হয় সেখানে? এ টুক ভাবতে পারি, আর-কিছু না। অথচ ‘আমার মাথার মধ্যে চিন্তানীহারিকা…’— এই মনে হওয়াটা কী সাবলীল বলে ফেললাম! আমি জানি এই মনে হওয়ার কোনও মানে নেই। মানে মাথার মধ্যে কোনও তারা জন্মাতে পারে না। তারারা তো সব আকাশে! এটা আমি বুঝি তবু মনে হয়। কেন-না ওই শব্দবন্ধের প্রতীকী তাৎপর্য নিশ্চয়ই আছে। না-থাকলে বাংলার অধ্যাপক কথাটা বলতেন না! সেই ক্লাস লেকচারের অন্তত বছর দুই পর শব্দটা মাথার মধ্যে ভেসে উঠেছে। তখন তাৎপর্যটা জানা হয়নি। একটা তাৎপর্য অবশ্য নিজের মত করে দাঁড় করিয়েছি। মানুষের বোধই নক্ষত্র। এই তাৎপর্য একটা অপরাধ বোধের সঙ্গে কষ্টেরও জন্ম দিয়েছে। কষ্টটা বাবার জন্য। বাবার মাথা থেকে নাকি শব্দরা হারিয়ে গেছে, যাচ্ছে। একটা কথা বলতে গিয়ে— মানে একটা সংযোগ গড়ে তুলতে গিয়ে বাবা শব্দ খুঁজে পান না, প্রায়ই কথা থেমে যায়। এ সবের মানে তো একটা নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটছে! মানে বোধের মৃত্যু! এর লক্ষণ কি চোখের মণিমণ্ডল ঘোলাটে হয়ে যাওয়া? বাবার চোখ দেখলে কষ্ট হয়। সব দিকে দৃষ্টি রাখা উজ্জ্বল চোখদু’টো কেমন ভাবলেশহীন। মায়ের কাছে বাবার চোখ ছিল ‘ভয়ংকর সুন্দর’— মা কেন এমন মনে করতেন, জানি না। এখনও জানা যেতে পারে কিন্তু তাতে যদি মার মনের ভার বাড়ে, এই আশঙ্কায় জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমার মনে হত বাবার চোখ থেকে ‘এক্স-রে’ বের হয়— মনের গলিঘুঁজি সব দেখতে পান তিনি। বাবার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার এটা একটা কারণ। আর-একটা কারণ নিজেকে ঠিকভাবে এক্সপ্রেস করতে না-পারা। এতক্ষণ ধরে লেখাটা পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই আপনি তা বুঝে গেছেন!
আরও পড়ুন: একটি লিটল ম্যাগাজিন ও মৃণাল সেন

এই আত্মকথন হঠাৎ-ই লিখতে শুরু করেছি, বলা যেত। কিন্তু এটা যে আজকেই শুরু করলাম তার একটা কারণ আছে, বলা যাছে না। বেশ কিছুদিন ধরে আমার মনে হচ্ছিল, বিভিন্ন সময়ে যে কথাগুলো আমি বলতে চেয়েছি কিন্তু নানা কারণে তা বলা হয়নি, লেখা দরকার। আজ খবরের কাগজে বেশ কিছু বিজ্ঞাপন আর সম্পাদকীয়-নিবন্ধ পড়ে মনে পড়ল আজকের দিনটি মেয়েদের জন্য বিশেষ দিন, উদ্যাপনের দিন, আজ আটই মার্চ— আমার সেই না-বলা কথাগুলো আজকেই লেখা শুরু করা উচিত বলে মনে হল অন্তত আমি যে আর-একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি, তার পক্ষে যুক্তি সাজানোর ক্ষেত্রে— মানে নিজেকে দেখা এবং একইসঙ্গে ‘অন্য’কে দেখানোর জন্যও যে একটা আয়োজন জরুরি মনে হচ্ছিল, তার আরম্ভ এই দিনেই হওয়া উচিত! যদিও এই ‘অন্য’ এখনও পর্যন্ত অলীক। কেউ ‘বিশেষ’ হয়ে উঠতে পারেননি। বলা যেতে পারে, সেই মানুষটিকে আমি খুঁজছি… এবং তাঁকে লক্ষ করেই আমার এই লেখা। এমনও হতে পারে, যে-আপনি লেখাটা পড়ছেন বা যাঁর পড়ার সম্ভাবনা আছে, তিনিও আমার সেই ‘বিশেষ মানুষ’ হতে পারেন। মানে একাধিক জন হওয়া সম্ভব। এ-টুকুই ভূমিকা হিসাবে রেখে, পাঠক, আপনাকে নিবেদন করছি এই লেখা! এবার অবশ্যই একটু গুছিয়ে বলতে হবে। সিদ্ধান্ত যে এই প্রথম নিতে যাচ্ছি তা-কিন্তু নয়, এর আগেও কয়েকটা নেওয়া হয়েছে তবে সেগুলির অধিকাংশ নিজের সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছি। তার একটার ‘গল্প’, মানে, আফটার এফেক্ট এখন লিখব, তাতে হয়তো পরম্পরা বুঝতে সুবিধে হবে।
আপনা মাংসে হরিণা বৈরি
‘আমি মাথা উঁচু করে হাঁটব’— সিদ্ধান্তটা একাই নিয়েছিলাম। গল্পটা এই সিদ্ধান্তের পর। সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে অভ্যাসবশত পায়ের দিকে চোখ রেখে হাঁটছিলাম… কয়েক পা হাঁটার পর আমার সিদ্ধান্তের কথা মনে পড়ে গেল। শরীরে যেন একটা ঝটকা লাগল। সোজা হল ঘাড়। আমাদের গলি থেকে বড় রাস্তায় ওঠার মুখে মনে হল আমার এত দিনকার হাঁটার ঢঙে বদল আসছে! রাস্তায় ওঠার পর আমার চোখে উঠল রোদচশমা। সবকিছু নতুন মনে হচ্ছে।
বড় রাস্তা ধরে মিনিট দুই যাওয়ার পর বাস স্টপেজ। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার সামনে দিয়ে জিলা পরিষদের যে রাস্তাটা চলে গেছে সোজা পশ্চিম দিকে, তার দু’পাশের দোকানপাট বাজার কেমন অচেনা দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি চোখভরে দেখছি। যারা আমাকে পুবপাড়ার ‘বণিকবাড়ি’র মেয়ে বলে চেনেজানে সেরকম দু’-এক জনকে বেশ অবাক হতে দেখলাম। আর যারা আমাকে ঘাড়গুঁজে-চলা মেয়ে হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত, তাদের সংশয়— এই কি সেই মেয়েটা!
এতদিন, সেই সেভেন-পড়ার বয়স থেকে গতকাল পর্যন্ত, অনেকেই যে আমাকে নানান দৃষ্টিতে দেখেছে— এটা আমি অনুভব করেছি। নানা কথা শুনেছি (পড়ার সঙ্গে মিলে গেছে)… আজ আমি কান পেতে আছি। দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট। ওই যে আমার পাঁচ নম্বর— প্রেম নিবেদন করা ছেলেটি বাইকের উপর বসে আছে। তার অবাক হওয়া দেখে বেশ মজা লাগল। কিন্তু কোনও ভাবনা এলো না। আমি জেনে গেছি, এভাবেই আরও চারজনকে আমার যাওয়া-আসার পথে কোথাও না কোথাও দেখা যাবে। কেউ এগিয়ে এসে কথা বলবে। সময়ের কারসাজিতে আমাকে কেউ দেখতে না-পেয়ে ফোন করতে পারে। বিরক্ত না হয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলব।
তারপর যা ঘটল—
কয়েকদিন পর, রাতে খাবার টেবিলে বসে আমার খেয়াল হল টিভি চলছে না। এ সময় খবর দেখা বাবার অভ্যাস। যদিও খবর দেখলে তাঁর টেনশন বাড়ে। অবশ্য এও বলা যেতে পারে যে, টেনশন বাড়ানো খবরগুলো আমাদের সকলেরই সহনশক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। দাদার দৃষ্টি টিউব লাইটের দিকে, একটা টিকটিকিকে সে দেখছে একমনে। টিকটিকিটা কী একটা পোকা তাক করে আছে। ‘টিভি বন্ধ কেন’ বলে আমি উঠতে যেতেই বাবা বললেন, ‘থাক!’ আমি বসতেই কোনও ভনিতা না করে বাবা জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি মনে করছ বিনু যে, তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছ?’ আমি তখনও জানিনি যথেষ্ট বড় হওয়া কাকে বলে। একটু চুপ থেকে বললাম, ‘এ কথা বলছ কেন বাবা?’ বাবা রাগত স্বরে বললেন, ‘প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করার স্বভাবটা আজও গেল না তোমার!’ আমি ভাবলাম, এই স্বভাবটার বদল ঘটানো বোধহয় যথেষ্ট বড় হওয়ার একটা লক্ষণ। তার মধ্যেই শুনলাম, মা বলছেন, ‘তোকে মাথা নিচু করে পথ চলতে বলা হয়েছিল না?’ আমার শরীরে আজ আবার সেই ঝটকা… শান্তভাবে বললাম, ‘এই কয়েকদিন আগে পর্যন্ত, আমি-কিন্তু তোমাদের নির্দেশ পালন করেছি, মা! তবু-কিন্তু ‘মাল’ শব্দটা আমাকে শুনতে হয়েছে। কে বলছে, বুঝতে পারিনি, তখন তো দৃষ্টি একেবারে পায়ের নখের সাথে মিশে থাকত! চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়নি। হ্যাঁ বাবা, আমাকে বড় হতে হয়েছে— টেনশন করবে না-কিন্তু, একটা খারাপ কথা বলছি, আমার গ্রাম থেকে ইউনিভার্সিটি— দীর্ঘ এই পথে পাঁচ-পাঁচ জন ছেলে আমাকে জানিয়েছে যে, তারা আমাকে ভালোবাসে’…
আরও পড়ুন: সর্বজনীন ও সম্প্রীতির আলোকে ‘ঈদ’

বাবা মানুষটার খাওয়া বন্ধ হল। বলে কী মেয়েটা! আমাকে যেন অচেনা মনে হচ্ছে তাঁর। মার মুখেও কথা নেই। দু’জনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তাঁদের মনে যেন জন্ম দিচ্ছে নানা অশুভ দৃশ্যের। একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন কিন্তু কেউ কারও চোখের ভাষা পড়তে পারছেন না। আর দাদা— একেবারে নির্লিপ্ত, খেয়ে যাচ্ছে; ও যেন জানে এমনটা ঘটাই স্বাভাবিক।
আমি বললাম, ‘ভাবনার কিছু নেই।’ বাবা আর্তনাদ করে উঠলেন, ‘বলছিস কী তুই!’ আমি এবার উঠে টিভি অন করে এসে বললাম, ‘খবর দেখ, খাও!’ আমি বসেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। বাবার এঁটো হাত যেন আর খুলছে না। আমি খেতে খেতেই বললাম, ‘আচ্ছা বলো! কী ভাবতে পারো তোমরা?’ বাবার কণ্ঠস্বর যেন রুদ্ধ, মা বললেন, ‘চারদিকে যা ঘটছে…’ খাওয়া বন্ধ করে আমি বললাম, ‘মানে দুর্ভাবনা— হরণ, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন— এ সব ঘটতে পারে; এর বাইরে আর-কিছু ভাবতে পারা যায় না, ঠিক; কিন্তু মা, আমার ক্ষেত্রে এর কিচ্ছুটি ঘটবে না। (স্ক্রিনে চোখ রেখে) এই যে— আবার যুদ্ধজিগির… যদি যুদ্ধ লাগে, তখন ওই সবই-কিন্তু আমাদের জীবনে ঘটতে পারে।’ এবার দাদা মুখ তুলে এক পলক আমাকে দেখে বলল, ‘এটাও বল্ যে, যুদ্ধ-দাঙ্গা মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে ভয়ংকর!’
বাবার চোখ অভ্যাসবশত কখন স্ক্রিনে চলে গেছে… কী একটা খবরের সূত্র ধরেই তিনি বললেন, ‘বাইরে ভেবেচিন্তে কথা বলিস, কোনও কথা যেন যুদ্ধবিরোধী না হয়!’
আমি বললাম, ‘না বাবা, ইউনিভারসিটিতে আমাদের সিদ্ধান্তই হয়েছে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলবই— ১৯৭১-এর যুদ্ধে, গুজরাত-দাঙ্গায় মেয়েদের উপর যে বীভৎস অত্যাচার হয়েছিল, তার কথা তুলে তুলে আমরা কথা বলছি…’
বাবা মুখে ভাত তুললেন।
কারণ ছাড়া কোথাও ঘটনা নেই
যদি সেই মানুষটার মুখোমুখি বসে কথা বলতে পারতাম, তিনি নিশ্চয়ই বলে উঠতেন, তার পর? তখন আমি যা বলতাম, এখন সেটাই লিখছি—
একদিন আমার দাদা সেই ছেলে পাঁচটা সম্বন্ধে জানতে চাইল। তাদের সম্বন্ধে আমার জানাটুকু জানালাম। এক জন শাসকদলের যুবনেতা, এক জন সবে কলেজে পড়াতে ঢুকেছে, এক জন গবেষক, চতুর্থ জন মনে হয় ছাত্রনেতা আর পঞ্চম— আমাদের গ্রামের পাম্পডিলারের ছেলে। সকলেরই অবস্থা আমাদের তুলনায় মনে হয় ভালো। পাত্র হিসাবে বাবার অপছন্দ হবে বলে মনে হয় না যদি না কাস্টের ব্যাপারটা ধরা হয়। আরও একজন আছে, একটি মেয়ে, সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে! আমার ঠোঁটের কোণে তির্যক হাসি। দাদা নজর করল কি না বুঝতে পারলাম না। সে তাদের বাড়ির কথা জিগ্যেস করল। আমি জানালাম, এক জনের বাড়ি আমাদের গ্রামে, আর তিন জন কে কোথায় থাকে জানা নেই, পঞ্চম জন আমাদের রেল স্টেশনের কাছে কোথাও থাকে। সম্ভবত কেউ কাউকে চেনে না। দাদা বলল, ‘আর-কিছু জানিস নে?’ আমি বললাম, ‘না। আচ্ছা ধর্ ডিটেলে জানা গেল— কী করবি?’ তাকে যেন ভাবনার মধ্যে ফেলে দিয়েছি, চুপ থাকতে দেখে একটু মজা করার ঢঙে বললাম, ‘কয়েকটা দক্ষিণ ভারতের অ্যাকশন-ফিল্ম দেখে নে, আমাকে রক্ষা করার জন্য দেখ্ একটা ভালো চিত্রনাট্য লেখা যায় কি না, স্ক্রিপ্টে অন্তত চারটে মার্ডার থাকবে!’ দাদা বলল, ‘খুব মজায় আছিস মনে হচ্ছে!’ আমি বললাম, ‘একদম! কারণ, যা ঘটবে, তা তো আমিই ঘটাব! অবশ্য তোদের সহযোগিতা না পেলে আমি কিছুই করতে পারব না।’
আচ্ছা বলুন তো, কী ঘটাতে পারি আমি? পাঠক আপনাকেই বলছি! যদিও আপনার পরামর্শ পাওয়ার কোনও উপায় নেই। তবু আপনি ভাবুন! আমার গল্পের সঙ্গে তখন মিলিয়ে নেবেন যখন ঘটনার কথা বলব।
আমার সেই ‘প্রেমিক মেয়েটি’, নাম সোমা, তার কাছে ফোনে ব্যাপারটা জানতে চাইলাম, মানে আমার কী করা উচিত। তিন দিন ধরে অনেক ভাবনা-চিন্তার পর সে ওভার ফোন জানতে চাইল আমার জন্মদিন কবে।
তারপর আমাদের দেখা হল। একটা প্ল্যান, সোমার ভাষায় ‘কার্যকারণ-ছক’ তৈরি হল। কার্যকারণ-ছক— কথাটা শব্দ হয়ে আমার মাথার মধ্যে রয়ে গেছে। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার ছাব্বিশতম জন্মদিনে সেই সিদ্ধান্ত থেকে যা ঘটল— এবার সেই গল্প:
আরও পড়ুন: মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের প্রাণ ব্রজ রায়

একটা জন্মদিনের পার্টি কল্পনা করুন! অন্তত সিনেমায় দেখা কোনও দৃশ্য মনে করলেও চলবে। তবে আমাদের বাড়িতে জন্মদিনের জাঁক সেই প্রথম এবং শেষও— নিমন্ত্রিতরা অনেকেই একে অন্যের পরিচিত। কেউ কেউ পরিচিত না হলেও চেনা মুখের। মা-বাবা, দাদা, আমি যে যার মতো করে আমাদের পরিচিত জনের সঙ্গে অন্যকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। আমি যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি সকলকেই ‘বন্ধু’ বলে পরিচয় করিয়েছি। মোবাইল ক্লিকে ছবি, সেলফি উঠেছে। লো ভল্যুমে সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে রবীন্দ্রসংগীত। অতিথি-অভ্যাগতরা থোকা থোকা কথায় ব্যস্ত। কেউ কেউ একা হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে— ঘরের ডেকরেটিংটাও দেখার মতো হয়ে আছে ফুল-আলো-বেলুনে, দেখছেন কেউ কেউ। কেক-মোমবাতি প্রস্তুত। এই আবহাওয়ায় আমি কিছুক্ষণ ছিলাম না। সোমাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসতেই কেউ একজন ডাকল আমাকে। দাদা আমার হাতে ছুরি ধরিয়ে দিল। সকলের উদ্দেশে আমি বললাম, ‘একটু শুনবেন, প্লিজ! # সকলের সাথে আলাপ করিয়ে দিই, (সোমাকে কাছে টেনে নিয়েছি, সে আমার গা ঘেঁষে) এ, আমার প্রিয় বন্ধু, সোমা, সোমা বড়ুয়া।’
সোমার সাথে নমস্কার বিনিময় হওয়ার পর আমি উপস্থিত যথাযোগ্যজনকে আমার প্রণাম ও নমস্কার নিবেদন করলাম। সোমার মোমবাতি জ্বালানোর উদ্যোগে বাধা দিয়ে বললাম, ‘বাতি জ্বলার আগে আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই! যদি আপনারা অনুমতি দেন?’
অনুমতি-সূচক গুঞ্জনের মধ্যে সোমা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। গুঞ্জন থিতিয়ে গেলে বললাম, ‘ধন্যবাদ! আসলে আমি একটা সমস্যায় পড়েছি। সকলের আশীর্বাদ-শুভেচ্ছার সঙ্গে এটা আমি শেয়ার করতে চাই! সমস্যাটা হল— গত দু’বছরে পাঁচজন যুবক বিভিন্ন সময়ে আমাকে ‘আই লাভ ইউ’-জানিয়েছেন। কিন্তু আমি তাঁদের কাউকে কিছু বলতে পারিনি। # এর মানে-কিন্তু এই না যে, আমি তাঁদের উপেক্ষা করে চলছি। সকলের সাথে কমবেশি কথা হয়। তবে, বলা যায় একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। কারণ, মনে হয়, ওই ‘লাভ্’ ব্যাপারটা— বোধহয় আমার মধ্যে নেই। থাকলে শব্দ স্বরে, মানে কথায় কথায় নিশ্চয়ই তা ফুটে উঠত আর তেমনই কথা ছুটে আসত ও দিক থেকে— প্রেম আসে বলে মনে হয় না। সবার সঙ্গে খুবই কম কথা হয়। বেশিরভাগ আমার দিক থেকে থাকে প্রশ্ন। তবে কথারা খুব একটা লতায় না। আমার মধ্যে এই যে প্রেম জাগে না, ভাবনাটা আমার এই বন্ধুকে বলেছিলাম। সোমা গম্ভীরভাবে বলেছিল আমার মধ্যে নাকি ভয় কাজ করছে। আমারও মনে হল, তা হতে পারে— খবর হওয়া ত্রিকোণের ঘটনা দেখলে বা পড়লে আমার কেবল একটা কথাই মনে হয়, প্রেম এত বীভৎস কেন! ত্রিকোণে যদি এই হয় তবে ষড়কোণে না-জানি কী ঘটতে পারে! সেই পাঁচ জনের মধ্যে এমন কেউ থাকা সম্ভব যিনি যে কোনও বাধা সরিয়ে আমাকে ‘জয়’ করতে পারেন। মানে আমার জন্য রক্তপাত! ভেবে দেখেছি, ‘বীরভোগ্যা’ হতে আমার একটুও ভালো লাগবে না। আবার কাউকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার অর্থ আর-চারজনকে বাতিল করা— অ্যাসিড হামলা বা অন্য কিছু ঘটতে পারে! আমার মা-বাবা খুব টেনশনে আছেন, আমিও… আমি কি সমস্যাটা বোঝাতে পারলাম?’
এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো সমস্ত ঘরে। সেই নৈঃশব্দ্যে ‘এক্সকিউজ মি’ ছুড়ে সোমা বলল, ‘আমি যদ্দুর জানি, সেই পাঁচজন এখানে উপস্থিত আছেন, আমার বন্ধু তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে,— তাঁদেরকে বলছি, দয়া করে আপনারাও ভাববেন ব্যাপারটা! আমার বন্ধু এ রকমও বলেছে যে, যদি আপনারা পাঁচ ভাই হতেন তা হলে পাঁচ জনের ভালোবাসা গ্রহণ করে সে কৃতার্থ হতে পারত!— এই ভাবনায় কোনও পাগলামি আছে কি না, বলা মুশকিল কিন্তু যুক্তি আছে— আমরা নিশ্চয়ই মহাভারত থেকে তাকে নৈতিক সাপোর্ট নিতে পারতাম!’
সোমার কথা শেষ হতেই আমি বললাম, ‘আমি এও ভেবেছি— ভাবনার পেছনে অবশ্য একটা গল্প আছে, গল্প না ইতিহাস— ঠিক জানি না, তবে ইনস্পায়ারিং মনে হয়েছে— আগে গল্পটা বলি—
‘এক দেশে এক মেয়ে ছিল। রূপে-গুণে এত অসাধারণ যে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, বহু রাজপুত্র তার রূপ-গুণে মুগ্ধ। এমন মুগ্ধ যে, মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য রাজপুত্ররা এক সময় কলহে জড়িয়ে পড়ল। কিন্তু মীমাংসার কোনও পথ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত রাজাদের হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত হল, মেয়েটি কোনও সংসারে প্রতিষ্ঠা পাবে না।’ # একটু দম নিয়ে বললাম, ‘মানে তার বিয়ে দেওয়া যাবে না, সে বিয়ে করতে পারবে না— মেয়েটিকে নগর-গণিকা রূপে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছিল।’
হালকা গুঞ্জন উঠে থিতিয়ে গেলে, আমার ভাবনাটা, বিশেষ করে যারা আমাকে ভালোবাসতে চেয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে নিবেদন করলাম, ‘যদি ইচ্ছে করেন, কী বলব, আমাকে সকলের বধূ হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পারেন, আমি সকলকেই স্বামী হিসাবে গ্রহণ করব!’
আরও পড়ুন: জনঅরণ্যে সম্প্রীতির বার্তা

কান পেতে ছিলাম। কোনও গুঞ্জনও উঠল না। আমার অস্থির দৃষ্টি কেবল দেখল বাবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টার সফল না হওয়া। বললাম, ‘এই! জানি না আমি আপনাদের অসম্মান করলাম কি না। যদি করে থাকি আমাকে ক্ষমা করবেন!’
কথা শেষ হতেই দেশলাই কাঠি জ্বলে ওঠার শব্দ ধরল আমার কান।
অনেকেই চমকে উঠে দেখল সোমা মোমবাতি জ্বালাচ্ছে… আর আশ্চর্য! তখনই একটা হাততালি বাজল। তারপর আর-একটা…
অনেককটা, একটা নির্দিষ্ট রিদম পেল। তালি কীসের জন্য ঠিক বোঝা গেল না। বাতি নেভানোর সময় অবশ্য আর-একবার তালি বেজেছিল।
কেক-কাটা পর্ব মিটে গেলে আমার বন্ধুদের একজন বলল, ‘এবার তা হলে আলোচনা শুরু হতে পারে!’
(এখানে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি— আমার বন্ধু ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, জন্মদিনের এই সন্ধ্যা এক আলোচনা সভায় রূপ পেলে আমি খুশি হব— উপহার হিসাবে এই ‘খুশি’টুকই পেতে চাই!)।
আমার দাদা বলল, ‘নিশ্চয়!’ সোমা বলল, ‘আর একটু কথা, শুনবেন প্লিজ! এই আলো-সুরের মধ্যে কোথাও বেসুর বেজেছে, প্রকাশ পেয়েছে কালো— মেয়ের কাণ্ড দেখে বাবা মর্মাহত, একটু আগেই তিনি আমাকে ডেকে জানালেন, এ কী ধরনের কথা! তিনি দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী— এটা ঘোষণা করতে চান… আমি তাঁর হয়ে ক্ষমা চাইছি! আর এই প্রেক্ষিতেই আমরা মনে হল, এই বিষয়— মানে, সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে এই যে ক্রাইসিস— এটা বোধ হয় আমাদের আলোচনার বিষয় হতে পারে।’
আমাদের স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের রিটায়ার্ড হেড স্যার বললেন, ‘অতি উত্তম প্রস্তাব! তবে, এখানে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তা-কিন্তু ভুলে যেতে হবে, মনে রাখতে হবে, এই ক্রাইসিস আবহমানের, প্রসঙ্গত জানাই আমার মেয়ে এই রকম এক সমস্যার মধ্যে আছে…’
একজন প্রতিবেশী জানালেন, ‘মাস্টারমশাই ঠিকই বলেছেন।’
আমার মাসিমা, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী, বললেন, ‘বিষয় ঠিকই আছে কিন্তু আলোচনার উদ্দেশ্য যেন হয় সম্পর্ক তৈরিতে নারীর ভূমিকা…’
সোমা বলল, ‘ওকে! তা হলে আলোচনা শুরু হোক!’
আলোচনার কথা হুবহু লেখা সম্ভব না। মন দিয়ে শুনতে পারিনি। কারণ এক-একটা নতুন শব্দ ও কথা আমাকে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছিল। তবু সেই রাতেই মনে করে করে কিছু নোট করেছিলাম… আলোচনা শুরু করছিলেন আমার মাসিমা। তাঁর একটা কথা আমার আজও মনে আছে, ‘সম্পর্ক বুঝতে হলে আমাদের প্রকৃতির দিকে তাকাতে হবে!’ এ রকম কিছু কথা আমি বলতে পারব, যেমন মনে পড়ছে, আমার সেই ‘অধ্যাপক’ বন্ধু, তাঁর বক্তব্যে প্রেমের মানে বোঝাতে গিয়ে তিনি একটা কবিতার লাইন ‘আরো আলো, মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়’ বলে বলেছিলেন, ‘এটা একজন পুরুষের আকাঙ্ক্ষা— নারীর-যে আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, স্যরি টু স্যে, আমরা পুরুষরা তা মনে রাখি না, প্রেম মানে আরও আলো, মানুষীর তরে এক মানুষের গভীর হৃদয়!— এ রকমটাও হওয়া উচিত!’ আমি তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। সোমার কথাও মনে আছে। জানি না কখনও ভুলব কি না! মাসিমার প্রকৃতিপাঠের কথা উল্লেখ করে সোমা বলেছিল, ‘সেক্স— মানে যদি যৌনতা বুঝি তা হলে মনে রাখতে হবে, যৌনতা— শব্দটির উৎস ‘যোনি’। আবার কেবল যদি নারী-পুরুষ, মানে জেন্ডার বুঝি, তাতেও ভুল হবে— এটা অনেকেই জানেন, মানুষের দেহ মূলত দ্বৈতসত্তার আধার, কিন্তু— কোনও একটি সত্তা নিষ্ক্রিয় থাকে বলে নারী বা পুরুষ হিসাবে আমাদের দেহ গঠিত হয় কিন্তু একই দেহে নারীপুরুষ সক্রিয় থাকতে পারে— এই প্রকৃতিপাঠও জরুরি, তা না-হলে আমরা ভুল পার্টনার নির্বাচন করব, এমনকী ভুল মানুষকে প্রোপোজ করা হতে পারে।’ সোমার কথা শুনতে শুনতে তাকে কেমন অচেনা লাগছিল! কত জানে! অবাক হচ্ছিলাম। তার কথার রেশ ধরে একটি ছেলে বলেছিল, ‘পশুজগতে সেক্সের এলাকা কিন্তু রক্তপাতহীন নয়!’ সে ঠিক কী বলতে চাইছে, বুঝিনি— তবে মনে হয়, আমার আশঙ্কার কথা না ভুলে, মানুষের ক্ষেত্রে এটা মেনে নিয়ে, যতটা সম্ভব রক্তপাত এড়ানোর কথাই সে বলতে চেয়েছিল। আমার সেই হেড স্যারের কথাটা— ‘মানবিক যৌনতা’! মনে পড়ছে, তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষের মনে রাখা উচিত, সে মানবিক সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, তার যৌনতার পাশবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম! দুঃখের বিষয়, মানুষ যত ‘উন্নত’ হয়েছে ততই তার যৌনতা হয়েছে অমানবিক, কেন-না, সম্পর্ক তৈরিতে নারীর কোনও সচেতন ভূমিকা নেই। ধর্ম রাজনীতি— কেউই মানবিক যৌনতার কথা ভাবেনি, এমনকী, দার্শনিকগণও এ বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব, অন্তত আমার জানা নেই।’ তাঁর কথা ভীষণ ভাবনার বিষয় হয়ে আছে। মানে যৌনতা দর্শনের বিষয় হয়নি। সত্যিই তো! কেন?
প্রায় সকলের আলোচনায় মহাভারত, জাতক, এমনকী কুরআন শরীফ থেকে রেফারেন্স উঠে এসেছিল। বুদ্ধ, মনু, মার্ক্সের কথাও কেউ কেউ বলেছিলেন। আমার কাছে সবই ছিল নতুন। এবং আমি উপলব্ধি করেছি, মেয়েমানুষ সম্বন্ধে ধারণা খারাপ আছে বলেই মা-বাবা, বিশেষ করে মা চান তাঁর মেয়েকে ওই ধারণা যেন স্পর্শ না করে! অন্তত যতক্ষণ না তার বিয়ে হয়। এটা কেবল আমার উপলব্ধি নয়, আমার অভিজ্ঞতাও!
সেদিন সত্যিই আমি খুশি হয়েছিলাম। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলাম, ‘আপনারা আমাকে অনেক আলো দিলেন! খুব বড় গিফট!’ পাঠকবন্ধু! জানি না, এ রকম ঘটতে পারে— আপনি ভেবেছিলেন কি না। আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, সমস্যাটা কি মিটল? এক কথায় উত্তর, হ্যাঁ। কিন্তু পরবর্তী পরিচ্ছেদে যেতে হলে বলতে হবে, আমাকে আরও সমস্যায় জডিয়ে সমস্যাটা পালিয়েছে…
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার
সুরঞ্জন প্রামাণিক-এর জন্ম ৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৬২ (১৯৫৫)। প্রথাগত শিক্ষা বিএ। পেশা সরকারি চাকরি (অবসরপ্রাপ্ত)। প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯২-এ। ঘোষিত ভাবেই লিটল ম্যাগাজিনের গল্পকার। ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস, প্রবন্ধ সংকলন। নানান আলোচনার সূত্র ধরে বলা যায় তিনি মনস্বী গল্পকার— ‘মনকে সজাগ রেখে গল্প পাঠ করিয়ে নেন’। তাঁর লেখা পড়তে মগজের চর্চা করতেই হয়। আমাদের গোপন এবং প্রকাশ্য… স্বপ্ন এবং বাস্তব সবই তাঁর কলমে বিদ্ধ। সুরঞ্জনের লেখা কখনো পাঠককে বোবা-কালা-অন্ধ ক’রে দেয় না, বরং চৈতন্যের মধ্যেই যেন ধাক্কা দিতে চায়। যা আমাদের অনুভবকে জারিত করে, মননকে ঋদ্ধ করে এবং পরিণামে আমরা আমাদের প্রকৃত সত্যকে শনাক্ত করতে পারি। তিনি ‘কবি’, ‘তাঁর গদ্যে জ্যোৎস্না নামে’। তিনি ‘চিত্রকর’, ‘গল্পের শরীরের কাহিনির সঙ্গে সঙ্গে একটি ছবির নির্মাণ করতে থাকে।’ ‘সোনালি ডানার চিল’-এর জন্য পেয়েছেন সমর মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (২০১২) ও ‘বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর সামগ্রিক কৃতির প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে’ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তাঁকে অর্পণ করেছে শান্তি সাহা স্মারক পুরস্কার (২০১৪)।
এক Magic Realism কে সঙ্গী করে সুরঞ্জন প্রামাণিক শুরু করলেন “সম্বুধজাতিকা”।
আমার বোন, আমার ভাইজি নিত্য যে সমস্যার সম্মুখীন, তা নতুন পৃথিবীকে নতুন আঙ্গিকে ভাবতে বাধ্য করলন সুরঞ্জন। এটাই স্বাভাবিক। এটাই নিয়ম।
নিত্যদিনের ঘটনা দাগ কাটে না সাধারণ মনে। সুরঞ্জন, মানবিক বোধ নিয়ে তা দেখলেন ও দেখানো শুরু করলেন। চোখ থাকলে দেখব আমরাও।
প্রেম যে না-মানুষীদেরও তাও মনে হয় জায়গা পাবে কাহিনিতে।
তবে হ্যাঁ, এই উপন্যাস পড়তে হলে পাঠকেরও এলেম থাকা চায়। নতুবা, জাদু বাস্তবতা ছোঁবে না তাকে। বিশ্বাস, লেখকের সে কাজ করিয়ে নেওয়ার ‘দঁক’ আছে।
অপেক্ষায় রইলাম ….