দু’দিনে দুই ডার্বি জয়, আজ রবিবার ছুটির দিনে সবুজ মেরুন প্রেমীদের পাতে হয়তো গলদা চিংড়ির পদ

অভিষেক মুখার্জী
বাংলা হল ফুটবলের মক্কা। আর বাঙালি মানেই ফুটবল। কলকাতা ফুটবলের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই যে শব্দটা মাথায় আসে, তা হল ‘ডার্বি’। বাঙালির কাছে ডার্বি মানেই আবেগ, উন্মাদনা, টানটান উত্তেজনা, মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল, ঘটি আর বাঙাল, সবুজ মেরুন আর লাল হলুদ, চিংড়ি আর ইলিশের ঠান্ডা লড়াই।
আরও পড়ুন: সত্যজিৎ ঘোষ: ফ্ল্যাশব্যাকে আশির দশকের কলকাতা ফুটবল দুনিয়া

গত পরশু (২৭ নভেম্বর) ছিল বাঙালি তথা আপামর ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথম দর্শকশূন্য মাঠে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল। সন্ধ্যা ৭টা বাজতে না বাজতেই মুড়ির বাটি আর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হাজির টিভির সামনে। যথাসময়ে খেলা শুরু হল। এক খাবল মুড়ি, গরম চায়ে চুমুক আর টিভির পর্দায় মোহন-ইস্টের খেলা— একজন বাঙালি ফুটবল-প্রেমীর কাছে এ-এক চরম প্রাপ্তি। একে অপরকে বুঝে নিতে নিতে প্রথমার্ধের খেলা গোলশূন্য শেষ হল। বিরতির মাঝেই চুলচেরা বিশ্লেষণ— কেন প্রীতম কোটাল পাসটা প্রবীরকে দিল না, কেনই বা সুরচন্দ্র ক্রসটা তুলল না, তর্ক-বিতর্কের মাঝেই দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয়ে গেল। রয় কৃষ্ণা ও মনবীরের দুর্দান্ত গোলে ‘ডার্বির রং সবুজ-মেরুন’। ফলাফল ২-০। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাল সবুজ মেরুন ব্রিগেড।
গত পরশুর ডার্বির রেস কাটতে না কাটতেই গতকাল হল আবার ডার্বি। হ্যাঁ ঠিকই। আবার বাঙালির চিরাচরিত সেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের লড়াই, তবে সেটা ক্রিকেটের ময়দানে। বেঙ্গল টি-২০ চ্যালেঞ্জের ম্যাচে টসে জিতে বিবেক সিং ৪১ ও অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদারের ৫৫ (৩৭ বল) রানের ঝকঝকে ইনিংসের ওপর ভর করে মোহনবাগান ১২২ রানের টার্গেট দেয় ইস্টবেঙ্গলকে। উল্লেখ্য, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কণিষ্ক শেঠ ৩১ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন ও তাঁকে সঠিক সঙ্গ দেন বি অমিত ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে।
আরও পড়ুন: এআইএফএফ-এর দাবি নস্যাৎ করলেন কুরেশি

জবাবে ব্যাট করতে নেমে, ইস্টবেঙ্গল প্রথম ১০ ওভারেই পর পর ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। এমন সময় হাল ধরেন সায়ন শেখর মণ্ডল। তাঁর হার না মানা ৫২ রানের এক অনবদ্য ইনিংস ইস্টবেঙ্গলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। কিন্তু অধিনায়ক অনুষ্টুপের বুদ্ধিমত্তা আর সায়ন ঘোষের শেষ ওভারের বল ম্যাচটাকে এক রোমাঞ্চকর রোমহর্ষক ম্যাচে পরিণত করে।
ইস্টবেঙ্গলকে জিততে গেলে শেষ ১ বলে ৩ রান করতে হবে, স্ট্রাইকে প্রতিভাবান সেট ব্যাটসম্যান সায়ন শেখর মণ্ডল। এহেন টানটান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বল করতে আসা মোহনবাগানের সায়ন ঘোষ শীতল মানসিকতার পরিচয় দিলেন। সায়ন মণ্ডলের ব্যাটে বল লাগতেই ছোটা শুরু করলেন তিনি। তবে ডবল রান সম্পূর্ণ করার আগেই রানআউট হয়ে যান সায়ন। এরসঙ্গেই সুনিশ্চিত হয় মোহনবাগানের কাঙ্ক্ষিত জয়। উল্লেখ্য, ঋত্বিক চ্যাটার্জি চার ওভারে ১টি মেডেন সহ মাত্র ৬ রান দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট তুলে নেন, ম্যাচের সেরার মুকুট ওঠে তাঁরই মাথায়।

এই করোনাকালে এইরকম তুল্যমূল্য ডার্বি ম্যাচ বাঙালির শরীরের অক্সিজেন মাত্রা যে বাড়িয়ে দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পর পর দু’দিনে ডার্বির রং সবুজ মেরুন করে মোহনবাগান এক অনন্য নজির স্থাপন করল। আর হ্যাঁ, আজ রবিবাসরীয় ছুটির দিনে সবুজ মেরুন প্রেমীদের পাতে যে গলদা চিংড়ির পদ উঠতে চলেছে, সে-কথা বলাই যায়।